রবিবার, ১৭ জুন, ২০১২

একটি গণঅভ্যুত্থানের সন্ধানে

আবদুল মান্নান


বছর দুই ধরে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে বিরোধী দল সরকারবিরোধী আন্দোলনে করে আসছে। প্রথমে তিনি শুরু করেছিলেন তাঁর নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটকে নিয়ে। আন্দোলনে চাঙ্গা করতে তেমন সুবিধা করতে না পারায় পরে তাতে আরও কিছু নামসর্বস্ব ওয়ানম্যান হোন্ডা পার্টি যোগ হয়। এখন এই বিরোধীদলীয় মোর্চাকে বল হয় ১৮ দলীয় জাতীয়তাবাদী ঐক্যজোট। তাদের সকলের নেতা বেগম জিয়া। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সরকার বিরোধী দল বা জোট থাকবে তাই স্বাভাবিক। এই বিরোধী দল বা জোট সংসদ এবং সংসদের বাইরে সরকারের বিভিন্ন নীতি, কার্যক্রম, ব্যর্থতা এবং সিদ্ধান্তের সমালোচনা করবে এবং সরকারকে ভাল বিকল্প দেখাবে আর সরকারও তা ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করবে এটাই রীতি হওয়া উচিত। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে তেমনটি ঘটতে অতীতে কখনও দেখা যায়নি। আগামীতেও দেখা যাওয়ার তেমন কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের দুটি বড় দলের প্রধান শেখ হাসিনা ও বেগম জিয়ার কিছু রাজনৈতিক এবং আচরণগত বৈপরীত্য লক্ষণীয়। বেগম জিয়া কখনও সাধারণ মানুষের কাতার থেকে রাজনীতি দেখেননি করার কথা দূরে থাক। তিনি ছিলেন এক সামরিক অফিসারের গৃহিণী। বিবাহিত জীবন ব্যাটম্যান সংস্কৃৃতিতে কাটিয়েছেন। ফায়-ফরমায়েশ খাটার জন্য গ-ায় গ-ায় চাকর-বাকর দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকত। বন্ধু মুনতাসীর মামুনের ভাষায় ‘কোই হাই সংস্কৃৃতি’ আর কী। হুকুম দিলেই সব কিছু হাতের কাছে পাওয়া যেত। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর খোন্দকার মোশতাকের হাত ঘুরে দেশের শাসন ভার সেনাপ্রধান স্বামী জিয়ার হাতে গেলে তিনি প্রথম রাষ্ট্রক্ষমতা কী তার মজা বুঝেন। আবার জিয়ার মৃত্যু হলে তিনি একসময় দলীয়প্রধান হিসাবে অভিসিক্ত হন তারপর এরশাদ পতনের পর দেশের প্রধানমন্ত্রী। বেগম জিয়ার রাজনীতিতে কখনো ত্যাগ তিতিক্ষা ছিল না। স্বামীর পেশার কারণে তিনি ভোগ বিলাসেই অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে সব কিছু উল্টো। রাজনৈতিক পরিবারের বড় সন্তান। একেবারেই সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা। পারিবারিক প্রধান আয়ের সূত্র কৃষি জমি। এক সময় তার পিতা শেখ মুজিব সংসার চালানোর জন্য একটি বীমা কোম্পানিতেও স্বল্প বেতনে চাকরি করেছেন। রাজনীতি করার সূত্রে কারাগারই ছিল তাঁর দ্বিতীয় আবাস। তিনি কারাগারে থাকতেই কন্যা শেখ হাসিনার বিয়ে হয়। বিয়ের খরচ মেটাতে স্ত্রী বেগম মুজিবকে নিকটজনদের কাছ হতে অর্থও ধার করতে হয়। বিয়ের পর নতুন বর কনেকে কিছু আওয়ামী লীগ নেতার উদ্যোগে বিবাহোত্তর সংবর্ধনা দেয়া হয় চট্টগ্রামে। শেখ হাসিনা ছাত্র জীবন হতেই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাজনীতিকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। বাবার সূত্রে অনেক বড় রাজনৈতিক নেতৃবৃৃন্দের সংস্পর্শে এসেছেন। সুতরাং এই দুই নেত্রীর মানসিক গঠন ও রাজনীতি সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি পৃথক হওয়াটা স্বাভাবিক। যাঁরা দু’জনকে কাছ থেকে দেখেছেন তাদের অনেকের মন্তব্য বেগম জিয়া এটা মেনে নিতে পারেন না তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নন আর শেখ হাসিনা অনেক সময় ভুলে যান তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা যখন একান্ত পরিচিত জনের মাঝে থাকেন তখন তিনি হয়ে ওঠেন বাড়ির একজন আপা, বড়বু, খালা, ফুফু অথবা চাচি। বড়দের কাছে তিনি কন্যাসম। গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে ‘মজিবরের মাইয়া।’ তিনি সহজে দূরের মানুষকেও আপন করে নিতে পারেন। বেগম জিয়ার আচার আচরণে এক ধরনের দাম্ভিকতা আছে। তার দলের অনেক বড়মাপের নেতা নেত্রীকে ব্যক্তিগত আলাপে বলতে শুনেছি ম্যাডামের সামনে গেলে স্বাভাবিকভাবে কথা বলা যায় না। তিনি মাঝখানে এক অদৃশ্য প্রাচীর সৃষ্টি করে ফেলেন। দু’জনের এই যখন অবস্থান তখন বেগম জিয়া তো চাইবেনই তাঁর হারানো অবস্থান পুনরুদ্ধার করতে। 
এরশাদের পতনের পর কখনও কেউ ভাবেনি ১৯৯১-এর নির্বাচনে বেগম জিয়ার দল বিজয়ী হবে। তিন শ’ সিটে প্রার্থী দেয়ার মতো লোকও তাদের ছিল না। আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক কৌশলগত ভুলে সেই নির্বাচনে তাদের অপ্রত্যাশিত পরাজয়। বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়ে শুধু যে ক্ষমতার স্বাদ পেলেন তাই নয় একই সঙ্গে ফিরে পেলেন তার পুরনো সব ভোগ বিলাসের সুযোগ সুবিধা। এটাই অনেকটা তার মাথা বিগড়ে দিল। এমন সুযোগ-সুবিধা কে ছাড়তে চায়? তারপরও বলতে হয় বেগম জিয়া ১৯৯১-৯৬ সালের শাসনকালে কিছুটা হলেও সংযমী ছিলেন। ২০০১-৬ মেয়াদে তাঁর শাসনামলে যে ধরনের অপশাসন, দুঃশাসন, দুর্নীতি, হাওয়া ভবনের জন্ম এবং সামরিক বেসামরিক প্রশাসনে এই ভবনের অযাচিত হস্তক্ষেপ ঘটেছিল তা আগেরবার তেমনটা হয়নি। তবে যেটি হয়েছিল নতুন মাত্রায় একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী লালন এবং তাদের ক্ষমতায়ন। বেগম জিয়া তাঁর প্রথম আমলের শাসনকালে শেষের দিকে এসে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে করেই হোক তাঁকে ক্ষমতায় থাকতেই হবে । এর সূত্র ধরেই জন্ম হয় মাগুরা উপ-নির্বাচন। তখন কারও বুঝতে অসুবিধা হয় না যে ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচন বেগম জিয়ার সরকারের অধীনে কোন অবস্থাতেই অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। এই প্রেক্ষাপটেই শুরু হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন, যে আন্দোলনে বিএনপি ছাড়া সকল রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজ অংশগ্রহণ করে। এক সময় এই আন্দোলনটি একটি মিনি গণআন্দোলনে রূপ নেয়। প্রথমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে বেগম জিয়া এবং তার দলের অনড় অবস্থান থাকলেও শেষ পর্যন্ত জনদাবির মুখে সে দাবি তাঁকে মানতে হয়। তার আগে অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের পনেরোই ফেব্রুয়ারির প্রহসনমূলক নির্বাচন যা সকল রাজনৈতিক দল বর্জন করলেও বেগম জিয়ার সঙ্গে অংশগ্রহণ করে বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের দল ফ্রিডম পার্টি। সংসদে কুমিল্লার একটি আসন হতে তিনি জিতিয়ে আনেন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ফ্রিডম পার্টির খুনী কর্নেল আবদুর রশিদকে। তাকে তিনি বানান তাঁর এই প্রহসনের সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা। সেই সংসদেই পাস হয় একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিল। তারপরও তার শেষ রক্ষা হয়নি যদিও তিনি চেষ্টা কম করেননি। তাঁর মনোনীত রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাসকে দিয়ে সামরিক বাহিনীতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করেন যা শেষ মুহূর্তে ভেস্তে যায় তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমানের বিচক্ষণতায়। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর বেগম জিয়া বুঝতে পারেন ক্ষমতা হারানোর বেদনা কী। শেখ হাসিনার ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের শাসনকালেও বর্তমানের মতো বেগম জিয়া বছর না পেরুতেই শুরু করেছিলেন সরকারবিরোধী আন্দোলন, তবে সে সময় তার পূর্বেকার আমলের পাপের বোঝা এখনকার মতো এত ভারি ছিল না। বেগম জিয়ার ২০০১-০৬ মেয়াদের সরকার এত পাপ করেছে যে সে পাপের ভারে তিনি আকণ্ঠ নিমজ্জিত এবং ন্যুব্জ। তার পুত্রদের, বিশেষ করে আরাফাত রহমান কোকোর দুর্নীতি তো আন্তর্জাতিক আদালতে স্বীকৃত। নিজে এক এগারোর পর জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করেছেন। বড় ছেলে তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির মামলা আদালতে বিচারাধীন। যে জেনারেল জিয়াকে আর্থিকভাবে একজন সৎ মানুষ হিসাবে তার দলের নেতা নেত্রীরা সব সময় তুলে ধরার চেষ্টা করে সেই জিয়ারই স্ত্রী বেগম জিয়া ক্ষমতায় থাকার সময় ভোগ বিলাসকে এক শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেনা নিবাসের যে বাড়িটি তিনি বেআইনীভাবে দখলে রেখেছিলেন আদালতের নির্দেশে তা ছাড়তে বাধ্য হন। বাড়ি ছাড়ার পর দেশের মানুষ দেখতে পায় ব্যক্তিগত জীবনে একজন ‘সৎ’ জিয়ার স্ত্রীর বিলাসিতা আর ভোগের মাত্রা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে। বেগম জিয়ার বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সবচাইতে বড় অপরাধ ছিল একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে তার জোট বাঁধা এবং নির্বাচনের পর দু’জন যুদ্ধাপরাধীকে মন্ত্রী বানানো। ইতিহাসের দৃষ্টিতে তাঁর এই কাজটি ছিল একটি অমার্জনীয় অপরাধ। 
বর্তমান সরকারের আমলে বিএনপির প্রথম হরতালটি ডাকা হয় তাঁর দখলকৃত সেনানিবাসের বাড়ি হতে উচ্ছেদের প্রতিবাদে। তাও কুরবানির ঈদের কয়েকদিন আগে। ব্যক্তিস্বার্থে হরতাল আহ্বান বাংলাদেশে অনেকটা নজিরবিহীন। এই হরতাল সাধারণ মানুষ কখনও ভালভাবে নেয়নি। তারপর তো একের পর এক হরতাল, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং তাতে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। ঢাকার বাইরে অন্য কোন শহরে এমন ধ্বংসাত্মক কর্মকা- অতীতে কখনও না ঘটলে ইদানীং দেখা যাচ্ছে তা চট্টগ্রাম সিলেটের মতো শহরেও ছড়িয়ে পড়ছে। হরতাল ডাকার কারণ হিসাবে যদিও বলা হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন মূল কারণ কিন্তু বেগম জিয়ার সন্তানদের ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করা। আসলে গত তিন বছরে যা হয়েছে বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল হিসাবে অনেকটা অস্তিত্ব হারিয়ে জামায়াতের পেটের ভিতর ঢুকে পড়েছে। বিএনপি যখন কোন রাজনৈতিক কর্মসূচী ঘোষণা করে তখন তা আর তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। চালকের আসনে বসে যায় জামায়াত। যে কোন জনসভায় প্রথমে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের নেতৃবৃন্দ। তাদের দাবি একটাই। যুদ্ধাপরাধ আর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যাদের বিচার হচ্ছে সেই চিহ্নিত ঘাতকদের মুক্তি। আর্থিকভাবে জামায়াত হচ্ছে এই মুহূর্তে সবচাইতে শক্তিশালী দল। তাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একটি বড় অংশ বর্তমানে মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে বিচারের মুখোমুখি। এদের সাজা হলে জামায়াতের অস্তিত্ব অনেকাংশে বিলুপ্ত হবে। বিএনপি যদি সামনের বার ক্ষমতায় আসতে না পারে তাহলে দলটির অবস্থা মুসলিম লীগ হয়ে যেতে পারে। সুতরাং এই দু’টি দলই তাদের অস্তিত্বের স্বার্থে জোটবদ্ধ হয়েছে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে। সঙ্গে আছে কিছু হোন্ডা পার্টি। 
বিএনপি-জামায়াত জোট বলে তাদের প্রধান দাবি হচ্ছে আগামী সংসদ নির্বাচন হতে হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। কিন্তু ইতোমধ্যে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সে ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে। তাদের দাবি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তা সুষ্ঠু হবে না। আওয়ামী লীগ এবং সংসদে তার মিত্ররা বলছে অসংসদীয় ব্যবস্থায় নির্বাচন নয় নির্বাচন হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে এবং সে সরকারে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা থাকবেন। এটি সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তা মানতে নারাজ বিএনপি এবং তার মিত্ররা। তবে তারা তাদের বক্তব্য সংসদে গিয়ে তুলে ধরতেও নারাজ। এমন একটা অচল অবস্থার প্রেক্ষাপটে ইদানীং বিএনপির নেতৃবৃন্দ বলা শুরু করেছেন তারা তাদের আন্দোলনের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান ঘটাবেন এবং তার ফলে বর্তমান সরকারের পতন হবে আর তা যদি হয় তা হলে তাদের ক্ষমতায় আসার পথ সুগম হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে তছনছ করে ২০০৬ সালেও বিএনপি-জামায়াত জোট এমন স্বপ্ন দেখেছিল যা পরবর্তীকালে তাদের জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছিল। 
বিএনপি ডাক দিলে এখনও তাদের সমাবেশে প্রচুর লোক সমাগম হয়। হওয়াটাই স্বাভাবিক কারণ তারা তো নির্বাচনের সময় প্রদত্ত ভোটের প্রায় ৩৮ ভাগের সমর্থন পায়। আর সঙ্গে আছে জামায়াতের বেতনভুক ক্যাডার। সুতরাং জনসমাবেশে লোকসমাগম কোন সমস্যাই নয়। তারপরও কোন গণঅভ্যুত্থান হয় না কারণ বিএনপি তাদের বর্তমান আন্দোলনের সঙ্গে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে পরেনি। না পারার অন্যতম কারণ সাধারণ মানুষ দেখেছে তাদের ভোটে বিজয়ী হয়ে বিএনপি কখনও সংসদে গিয়ে তাদের দাবির কথা বলে না। যে আন্দোলনে সাধারণ মানুষের দাবি উপেক্ষিত থাকে সে আন্দোলন কখনও গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাসে সত্যিকার অর্থে একবারই গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল ১৯৬৯ সালে এবং সামনে থেকে তার নেতৃত্ব দিয়েছিল এদেশের ছাত্র সমাজ। এরশাদবিরোধী আন্দোলন অনেকটা শহরকেন্দ্রিক আন্দোলন ছিল যেটিকে বড়জোর গণঅন্দোলন বলা যেতে পারে। বর্তমান অবস্থায় বিএনপির পক্ষে কোন গণঅভ্যুত্থান গড়ে তোলা সম্ভব নয় কারণ তারা শহরের বাইরের মানুষকে তাদের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পারবে না। গ্রামের অর্থনীতি আগের যে কোন সময়ের চাইতে এখন অনেক না হলেও ভাল। অন্তত মানুষ দু’বেলা লবণ দিয়ে হলেও ভাত খেতে পারে। বেগম জিয়ার শাসনামলে উত্তরবঙ্গে মঙ্গা ফিবছর হানা দিত যা এখন আর দেয় না। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল আছে, একেবারে বেকার তেমন মানুষের সংখ্যা ৫% এর বেশি নয়। বর্তমান সরকারের কিছু ব্যর্থতা সত্ত্বেও এই সব ক্ষেত্রে অর্জন তো মানুষ অস্বীকার করতে পারবে না। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে অনেক সমস্যা আছে যা বিএনপি সংসদে গিয়ে তুলে ধরতে পারত যা তারা করে না। সংসদে তারা মাঝে মাঝে যায় তবে তা তাদের আসন ধরে রাখতে। সংসদে না গেলেও তারা একজন সংসদ সদস্যের সকল সুযোগ-সুবিধা নেয়। সাধারণ মানুষ এসবকে কখনও ভালভাবে নেয় না। সত্যিকার অর্থে গণঅভ্যুত্থান গড়ে তুলতে হলে বিএনপিকে তাদের আন্দোলনের সঙ্গে জনমানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। তবে সবার আগে তাদের যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতের সংশ্রব ত্যাগ করতে হবে। তারেক জিয়া একদিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন এমন দিবাস্বপ্ন দেখা হতে আপাতত তাদের বিরত থাকতে হবে। আর তা যদি না হয় আন্দোলনের নামে তারা যা করছে বা করবে বলে নিয়মিত হুঙ্কার ছাড়েন তাতে শুধু সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে কাজের কাজ কিছুই হবে না। 

লেখক : শিক্ষাবিদ ও বিশ্লেষক, জুন ১৫, ২০১২

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন